ইসলামি নারীদের অবস্থান পুরুষের পাশপাশি এবং তাঁদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে অসংখ্য কুরআনের আয়াত ও হাদিস পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআন শরীফে নারীদের নামে “নিসা” নামে একটি সূরা নাজিল করেছেন।
আমাদের সমাজে ও ধর্মে মেয়েদের অধিকার, অবস্থান কিংবা দায়িত্ব নিয়ে অনেক বই পাঠক সমাজে সমাদৃত। আমরা আজকে এমন কিছু বই সম্পর্কে জানবো যার মাধ্যমে একজন নারী সে হোক কারো সন্তান, কারো স্ত্রী বা কারো বোন কিংবা মা, সেই নারী তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পারবে ইনশা-আল্লাহ্।
একজন মা যদি তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকেন তবেই আমরা সমাজে এমন একটি সন্তানকে পাই যার দ্বারা সমাজ ও দেশ উপকৃত হয়। আর এই সবকিছু ইসলাম একজন নারীকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে সে তাঁর পরবর্তী প্রজন্মকে সুপথে পরিচালিত করবে।
মেয়েদের জন্য সেরা ১০ টি ইসলামিক বইঃ
(বিস্তারিত জানতে বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন)
- মুহস্বানাত
- সারেন্ডার্ড ওয়াইফ
- হিজাব আমার পরিচয়
- জীবন যদি হতো নারী সাহাবীর মতো
- যে নারী উত্তম নারী
- মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান
- যেমন ছিলেন মুসলিম মহীয়সীরা
- তুমি ফিরবে বলে ফিমেইল ভার্সন
- পুণ্যবতীঃ মহীয়সী নারীদের জীবনের গল্প
- নারী সাহাবীদের দীপ্তিময় জীবন
মুহস্বানাত
মূল্যঃ দেখুন
আমার পড়া সবচেয়ে কার্যকরী বই এটি মাশাআল্লাহ।বইটিতে প্রায় একজন মেয়ের জীবনের সমস্ত ব্যাপার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নারী। যাদের জীবনে অনেক দায়িত্ব। শৈশবকাল থেকেই তার সেই দায়িত্ব শুরু হয়ে যায়। কৈশোরের চৌকাঠে পা দিলেই বাবার বাড়ির সংসার গুছানোর দায়িত্ব চেপে বসে কাঁধে। তারপর বয়স হলে বিয়ে, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি বা নিজের সংসার। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকদের নিয়ে গড়ে ওঠে আরেকটি নতুন জীবন। এরই মাঝে কোল জুড়ে আসে এক চিলতে মায়া। সন্তানকে মানুষ করার ঝোঁক তখন চেপে বসে মাথায়। অনেক দায়িত্ব! আর সেই নারী যদি হয় আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের প্রকৃত অনুসারী, তাহলে তো তার দায়িত্ব বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সাথে যুক্ত হয় জবাব্দিহিতার ভয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা, স্বামীকে খুশি রাখা, নিজেকে পর পুরুষের দৃষ্টি থেকে হেফাযত করা, সন্তানদের দ্বীনি পরিবেশ দেয়া, চারপাশের মানুষগুলোকে দ্বীনের পথে আহ্বান করা, একবিংশ শতাব্দীর বড় বড় ফিতনাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাওয়া…আরও কত কি!
আল্লাহ সুব. তাআলা পবিত্রতা পছন্দ করেন। সেই পবিত্রতা দেহের, সেই পবিত্রতা আত্মার। একজন মুসলিমাহ নিজের দেহ, পোশাক, সৌন্দর্য, চরিত্র, আখলাক সবকিছুই পবিত্র রাখবে, কলুষিত হতে দিবে না। তারাই তো ‘মুহস্বানাত’, তাবৎ দুনিয়ার সবচেয়ে দামী সম্পদ।
সারেন্ডার্ড ওয়াইফ
জন গ্রে – এর লেখা মেন আর ফ্রম মার্স, উইমেন আর ফ্রম ভিনাস বইটি পড়েছিলাম। এটা আমাকে নারী ও পুরুষের পারস্পরিক যোগাযোগ পদ্ধতির ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়। তখন কিছুটা উপলব্ধি হয় যে, জীবন সম্পর্কে নারী ও পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলোতে কতটা পার্থক্য বিদ্যমান।
আমি অন্য নারীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি এবং বোঝার চেষ্টা করি—তাদের দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার পেছনে কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তখনো জানতাম না যে, এরই মাধ্যমে আমি আত্মসমর্পণের পথে হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে চলতে শুরু করেছি। পরে এটাই হয়েছিল আমাদের দাম্পত্য জীবনে প্রশান্তি তৈরি করা এবং আমার হারানো আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে আনার মাধ্যম। আজ আমি একজন আত্মসমর্পণকারী স্ত্রী হিসেবে নিজের পরিচয় দিই। একজন নারী হিসেবে যেরকম দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম, ঠিক সেরকম একটা জীবনই পেতে শুরু করি এরপর থেকে। এই একই ব্যাপার আপনার ক্ষেত্রেও ঘটবে, যদি আপনি এ-বইয়ের মূলনীতিগুলো অনুসরণ করেন।
হিজাব আমার পরিচয়
হিজাব শুধু একটা জামা না। এটা একটা জীবন-পদ্ধতি। যে নারী এটা পরবে, সে তার আদর্শিক পরিচয় মানুষের সামনে তুলে ধরবে। প্রত্যেক মুসলিম মেয়েকে চেনা যায় তার সমুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব দিয়ে। লজ্জাশীলতা ও উত্তম চরিত্র দিয়ে। আর এসবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে হিজাবের মাধ্যমে। পর্দানশীন মেয়েরা এই বার্তা দিয়ে যায় যে, তারা অন্যান্যদের থেকে আলাদা। চিন্তা-চেতনা, চাল-চলন, রুচি ও মননে তারা অনেক উঁচু মাপের। সম্ভ্রান্ত। তাদের জীবনযাত্রা মানুষের জন্যে অনুসরণীয়, অনুকরণীয়।
মূল্যঃ দেখুন
হিজাবকে পাঠানো হয়েছে আসমানের ওপর থেকে। সে তোমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। তোমার ঈমানি সত্তার পরিচয় বহনকারী। এটা একটা আদর্শিক পরিচয়। তুমি কোন জীবন-দর্শন অনুসারে চলো, তার পরিচয়বাহক। তুমি যে মুসলিম নারী, তার প্রকাশ ঘটে হিজাবের মাধ্যমে। হিজাব তোমার পরিচয়।
মূল্যঃ দেখুন
জীবন যদি হতো নারী সাহাবীর মতো
মক্কা নগরীতে একজন মহামানবের আবির্ভাব হলো, আসমান থেকে তার ওপর নেমে এলো এক ঐশী আলোক রেখা, দলে দলে মানুষ সেই মহামানবের ডাকে সমবেত হতে শুরু করল। একটি অত্যুজ্জ্বল আলোর পানে ছুটে আসতে লাগল তৃষিত সব প্রাণ। সেই তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধিত প্রাণের মানুষগুলোর মাঝে, বিশাল একটি সংখ্যা ছিল নারীদের। নারী সাহাবিদের। রাযিয়াল্লাহু আনহুন্না। নবিজি যখন এক চরম, পরম ও মহাসত্যের দিকে মানুষকে আহ্বান করলেন, তখন অনেকের মতো চারদিক থেকে তৃষিত হৃদয়ে ছুটে এলো নারীদের দলও। তারাও বরণ করে নিল সত্যের পেয়ালা। যে অমৃত নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধারণ করে এনেছেন হেরা পর্বত থেকে, সেই অমৃত পান করতে উদগ্রীব হয়ে পড়লেন তারাও।
সত্যের এই মিছিলে যোগদান তাদের জন্য সহজ ছিল না মোটেও। নবিজির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে তারা হয়েছেন ঘরহারা। হারিয়েছেন প্রিয় মানুষ, প্রিয় মুখ। সত্যকে নিজেদের জীবনে ধারণ করতে গিয়ে তারা হিজরত করেছেন। ছেড়ে এসেছেন প্রিয় জন্মভূমি। এমনকি হাসিমুখে মৃত্যুর মিছিলেও তারা অংশ নিয়েছেন। তবু যে অমৃত তারা পান করেছেন, যে রঙে রাঙিয়েছেন জীবন, যে সুরে আবগাহন করেছেন তনুমন, সেই অমৃত, সেই রং, সেই সুর থেকে তারা একচুল পরিমাণও বিচ্যুত হননি। এতটাই দৃঢ় আর অবিচল ছিল তাদের ঈমান।
ঐশী আলোর ঝলকানিতে আমাদের নারী সাহাবিগণ তাদের জীবনকে করেছেন আলোকময়, যে সুর আর লহরির মাঝে তারা হারিয়ে গেছেন, সত্যের পথে হাঁটতে তারা যে ত্যাগ-তিতিক্ষা, যে বিসর্জন দিয়েছেন, তা-ই উপজীব্য হয়ে উঠে এসেছে আমাদের ‘জীবন যদি হতো নারী সাহাবির মতো’ বইতে। সত্য আর সুন্দরের জন্য তাদের কুরবানি, তাদের আত্মত্যাগের গল্পগুলো থেকে আমরা খুঁজে নেব আমাদের জীবনের রসদ। রাঙিয়ে নেব আমাদের জীবনোধ্যায়। শুধরে নেব ভুল। জাগিয়ে তুলব বিস্মৃত অন্তর।
যে নারী উত্তম নারী
নারীরা হল মায়ের জাতি। একজন আদর্শ মা আদর্শ জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন সন্তান জন্মলাভের পর থেকে মাতৃক্রোড়ে বসবাস করতে থাকে। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় সন্তানের শিক্ষা দীক্ষা। মাতৃক্রোড়ে থাকাবস্থাতেই শিশু শিখতে থাকে। স্বভাবতই শিশুরা মায়ের অনুকরণ করে। যে নারী যত বেশি সম্ভ্রান্ত এবং উত্তম আখলাকের অধিকারী থাকে সে নারী ততবেশি তার সন্তানদেরকে আখলাক ও চরিত্রের শিক্ষা দান করে। ফলে আদর্শ নারীর সন্তান স্বাভাবিকভাবেই আদর্শ সন্তান হয়ে থাকে।
ইসলাম মানবতার ধর্ম, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম ধর্মে সকলেই সমান। ইসলাম নারীকে দিয়েছে তার আসল মর্যাদা, সর্বোচ্চ মর্যাদা। যে মর্যাদা ইসলামের পূর্বে কোনো জাতি গোষ্ঠি কিংবা ধর্ম ও মতবাদ দিতে পারেনি।
সোনালী যুগের মায়েরা ছিলেন আদর্শবান নারী। তারা সন্তানদেরকে আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতেন। তাদেরকে শ্রেষ্ঠ আলেম ও সৈনিকে পরিণত করতেন।
কিন্তু বড় আফসোসের বিষয় হল, উম্মতের মায়েরা আজ সেসব বীর সেনানী ও শ্রেষ্ঠ আলেমদের প্রস্তুত করতে পারছে না। উম্মাহর প্রয়োজন আজ সেসব মায়েদের; যারা নিজেদের সন্তানকে ওয়াকফ করে দেবে লিওয়াজহিল্লাহ।
সেই সব মায়েদের জাগিয়ে দিতে, তাদের কর্ণকুহরে রাসুলের মূল্যবান বাণীগুলোকে গেঁথে দিতে আমার এ ছোট্র প্রয়াস।
মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান
মহিলাদের প্রায় সকল বিষয় একটি বইয়ের মধ্যে, বাংলাতে এমন বই খুব একটা চোখে পড়ে না। আরবের বিখ্যাত আলেম ডঃ সালেহ বিন ফাওযানের ‘মুমিন নারীদের বিশেষ বিধান’ বইতে একজন মুসলিম নারীর জানা আবশ্যক, এমন প্রায় সব বিষয় উঠে এসেছে।
নারীদের পবিত্রতা, পোশাক পর্দা, সাওম, হজ্জ-উমরাহ, বিবাহ-তালাক, সামাজিক জীবন, ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ভাষায় আলোচনা এসেছে। বইটি অনুবাদ করেছেন সানাউল্লাহ নজির আহমদ এবং সম্পাদনায় আছেন শাইখ ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া।
যেমন ছিলেন মুসলিম মহিয়সীরা
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নারীজাতিকে অনেক মর্যাদা নসিব করেছেন । কারণ , নারীরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর, তাঁদের কোনেই প্রতিপালিত হয় ভবিষ্যতের বড় আলেম , মনীষী , জ্ঞানী – গুণী । তাই আদর্শ মানুষ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর দায়িত্ব অনেক বেশি । সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায়ই শিশু বেড়ে উঠতে থাকে । মায়ের আচার – আচরণের প্রভাব শিশুর ওপর পড়তে থাকে এবং সে হিসাবেই দুনিয়ার মানুষ এখন বড় বড় মনীষী আলেম এবং ওলিকে চেনে । মূলত তাঁদের মায়েদের প্রচেষ্টায়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে এমন উঁচু মর্যাদায় সমাসীন করেছেন । তাঁরা এমন মা ছিলেন , যাঁরা ভোগ – বিলাসিতা পরিহার করে , ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করে নিজের সন্তানদের দীনের আলোয় আলোকিত করেছেন । শৈশব থেকেই অন্তরে সৃষ্টি করেছেন পরকালের ভাবনা । তাঁদের তালিম – তরবিয়ত পেয়ে স্বভাবগতভাবেই সস্তানরা ন্যায়পরায়ণ , আমানতদার , সত্যভাষী এবং শরিয়তের অনুসারী হয়ে গড়ে উঠেছে । এমন সতী – সাধ্বী নারীদের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আলোচনাই করা হয়েছে ‘ কেমন ছিলেন মুসলিম মহিয়সীরা ‘ গ্রন্থে। নন্দিত লেখক অনুবাদক এনামুল হক মাসউদ- এর দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় পাঠকদের কাছে এটি একটি মৌলিক গ্রন্থ হিসাবেই ধরা দিবে । গ্রন্থটি নারী – পুরুষ সবশ্রেণির পাঠকেরই পাথেয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস ।
তুমি ফিরবে বলে ফিমেইল ভার্সন
তারুণ্যের জোয়ার তাচ্ছিল্যের সাথে ছুড়ে ফেলতে চায় ছকবাঁধা জীবন। দুনিয়াকে উপভোগ করার উদাত্ত আহ্বানে জাহিলিয়াতের স্রোতে ভেসে বেড়ায় তারা। ভাসতে ভাসতে কেউ কেউ ডুবে যায় ব্যর্থতা ও হতাশার অতল গভীরে। কেউ বা গিয়ে পড়ে তরীহীন গভীর সমুদ্রে। ভেসে বেড়ায় দিকভ্রান্ত পথিকের মতন। তবে ক্ষতি যা হওয়ার, তা তো হয়েই যায়। লেখক চেষ্টা করেছেন সেই ক্ষতে একটুখানি ওষুধের প্রলেপ দিতে। অগ্নিকুণ্ডের লাভার দিকে ঝাঁকবেঁধে ছুটে চলা কিশোরী-তরুণীদের শাসনের সুরে লেখক বলতে চেয়েছেন—ওরে বোকা! ওটা আলো নয়, আগুন। ওখানে সুখ নেই কোনো, আছে দগ্ধ হওয়ার রসদ।
গদ্যে-পদ্যে-প্রবন্ধে অনবদ্য হয়ে উঠেছে বইখানি। আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত থেকে হইহই করে জ্বলন্ত আগুনের দিকে ছুটতে থাকা একঝাঁক তরুণীকে তিনি ফেরাতে চেয়েছেন। লাগাম টানতে চেয়েছেন তাদের পদযাত্রায়। কখনো অনুযোগে, কখনো অনুরোধে, কখনো বা ধমকের সুরে।
বইয়ের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন একেকটা জীবন্ত সত্তা। তারা কথা বলতে পারে। জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উদাসীন, দুনিয়ার মোহে বুঁদ হয়ে থাকা, নাচ-গান নিয়ে মত্ত, ছন্নছাড়া, উচ্ছৃঙ্খল তরুণীদের উদ্দেশ্যেই এই বইখানা লেখা। যতটা উচ্ছৃঙ্খলই সে হোক না কেন, এই বই তাকে দু-দণ্ড স্থির হয়ে বসে ভাবতে বাধ্য করবে। তার মধ্যে কিঞ্চিত পরিমাণে হলেও অনুশোচনাবোধ জাগ্রত করবে। তার চোখ দুটো সামান্য হলেও অশ্রুসিক্ত করবে, ইন শা আল্লাহ।
পুণ্যবতী : মহীয়সী নারীদের জীবনের গল্প
আমাদের নারীরা একত্র হলে তাদের গল্পের প্রধান বিষয়বস্তু হয় নাটক-সিনেমা, হিন্দি সিরিয়ালের কার কোন চরিত্র পছন্দ, কোন পোশাকগুলো ভালো লেগেছে, কার ঘরে কেমন ফার্নিচার-স্বর্ণালংকার আছে, কার স্বামীরা কেমন, কে কোন কোন দেশ ঘুরতে গিয়েছিল, কার ঘরে কী নেই, কে কোন পেরেশানিতে আছে, ইত্যাদি। কথায় আছে, “আমাদের নারীরা একশত টেনশন নিয়ে ঘুমোতে যায়, একটা নিজের, বাকী নিরানব্বইটা পাড়া-প্রতিবেশীর।” আর পরনিন্দা এবং গীবতচর্চা এখন মহামারীর পর্যায়ে। আজকের নারীরা যতজন নায়ক-নায়িকা-মডেলদের চেনে, মহীয়সী নারীদের তার সিকিভাগও চেনে না। এরা তথাকথিত মডেলদের মতো নিজের জীবনকে রঙিন করে সাজাতে চায়, কিন্তু বাস্তব জীবনে সুখের লেশমাত্র নেই। মুক্ত চিন্তার নগ্ন চর্চা আর বাঁধাহীন ডানা মেলে উড়তে গিয়ে পারিবার গুলো আজ ভঙ্গুর। রঙিন স্বপ্নে বিভোর এই নারীদের কোলে তাই জন্ম নেয় না বিশুদ্ধ মানুষ। নিত্যদিনের খুন-ধর্ষণ-পরকীয়া এগুলোর চাক্ষুষ সাক্ষ্য বহন করে। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় আমাদের পূর্বসূরি মহীয়সী নারীদের জীবন থেকে আলো গ্রহণ করে জীবনে এ পবিত্র আলো প্রতিফলিত করা।
.
দ্বীন পাবলিকেশনের অন্যতম উদ্দেশ্য পূর্ববর্তী মহীয়সী নারীদের জীবনী পাঠের মাধ্যমে আমাদের নারীদেরকে আলোকিত করা। এজন্য আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে উম্মুল মুমিনীন সিরিজ দিয়ে। উদ্দেশ্য; জান্নাতী এই নারীদের পরিচ্ছন্ন ও সুরভিত জীবনের মুহূর্তগুলো সরল ভঙ্গিমায় ফুটিয়ে তোলা। তাদের প্রাত্যহিক জীবনের গল্প, নবীজির সাথে মধুর খুনশুটি এবং আখিরাতমুখিতায় তাদের প্রতিযোগিতার কিরণ বর্ণের গাঁথুনিতে বিকীর্ণ করা। যেন এ কালের নারীরা এই আলোয় স্নাত হয়ে ঘরে দীপ্ত করতে পারে জান্নাতের নির্মল আলো।
.
এই বইয়ে যেমন আলোচিত হয়েছে তিন স্বর্ণযুগ স্পর্শ করা নারীদের চিত্র, তেমনি আলোচিত হয়েছে এই উপমহাদেশের মহীয়সী নারীদেরও গল্প। আশা করছি তাদের সংক্ষিপ্ত কিন্তু ঈমানদীপ্ত গল্পগুলো পড়ে আমাদের নারীরা পাথেয় সংগ্রহ করে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করতে পারবেন।
নারী সাহাবীদের দীপ্তিময় জীবন
জান্নাত চির সুখের ঠিকানা। মুমিনের কাজকর্ম সবকিছুই আবর্তিত হয় জান্নাতকে ঘিরে। আল্লাহর কিছু কিছু বান্দা দুনিয়াতেই তাদের নেক কাজ, ইখলাসের পরাকাষ্ঠা স্বরূপ জান্নাতের সুসংবাদ লাভে ধন্য হন। বইটি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ২৭ জন নারী সাহাবীর জীবনীর সংকলিত রূপ যাতে পাঠক জানতে পারবেন, সোনালী যুগের এই সোনালী মানুষগুলোর জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার আমলগুলো সম্পর্কে। কিভাবে তারা দুনিয়াতেই এই মহান সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।
রাজনীতি, অর্থনীতি, কাব্যালংকার, সন্তান প্রতিপালন, মধ্যরাতে প্রভুর দরবারে তাদের নিরব আহাজারি, জিহাদের ময়দানে অভিজ্ঞ ঘোরসাওয়ারের ন্যায় যুদ্ধের নিপুণতা প্রদর্শন, সৃষ্টিজীবের প্রতি তাদের দয়াদ্র আচরণ, হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে গভীর ব্যুৎপত্তি এই সবকিছু দ্বারাই তাদের চরিত্র মাধুর্য সজ্জিত ছিল।
মহান চরিত্রের এই নারীগণের মাঝে এমন আরও অনেক বিষয় রয়েছে যা আমাদের মুসলিম বোনদেরকে উৎসাহিত করবে।